লিখেছেন - হাসিব হক নভেম্বর ১৮, ২০১৯
আমরা
সবাই কিন্তু স্যাফরন অথবা জাফরান সম্পর্কে শুনি বা জানি। কেউ
কেউ ব্যবহারও করি। কিন্তু এটি এতোটাই ব্যয়বহুল যে সবার পক্ষে ব্যবহার
করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু অল্প পরিমাণ জাফরান ব্যবহার করেই এর
ন্যাচারাল
এবং জনপ্রিয় উপাদানটির উপকারিতাও কিন্তু অনেক। আজকে
আমরা জাফরানের উপকারিতা
ও কার্যকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।
জাফরানের পরিচিতি
জাফরান ক্রোকাস স্যাটিভা (crocus sativa) নামের একটি এক্সোটিক
(Exotic) বা বহিরাগত ফুল থেকে আহরিত হয়। এটি মূলত ইরান, ভারত
এবং গ্রিসের কিছু এলাকাতে হয়। বাংলাদেশে না হওয়ার কারণে এর
দামটা একটু বেশি। এটি মূলত ফুড কালারিং এজেন্ট (Food coloring
agent) হিসেবে বিভিন্ন খাবার এবং পেস্ট্রিতে ব্যবহার করা হয়। ৩৫০০
বছর আগ থেকে এর চাষ হয়ে আসছে এবং প্রায় ৯০টিরও বেশি রোগের
সমাধান দিয়ে থাকে এই উপাদানটি। ঠান্ডা, কাশি,
ঘুম
না হওয়া, কার্ডিও
ডিজিজ বা হার্টের সমস্যা, গর্ভাবস্থায়
ত্রৈমাসিক বিকাশ (Pregnancy
Trimester
Development) সহ আরও অনেক সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে।
এছাড়াও জাফরানে আছে ম্যাংগানিজ (Manganese), এন্টি
ইনফ্লামেটরি( Anti-Inflammatory) এবং এন্টি ফাংগাল এজেন্ট
(Antifungal agent) যা ব্লাড সুগার নিরাময় করে শরীরের প্রয়োজনীয়
হরমোন বিকাশ করে। এছাড়া আছে ভিটামিন সি (Vitamin C), যা ফেইস
এবং শরীরকে ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়া থেকে রক্ষা করে। এর
স্পেশাল সুগন্ধযুক্ত স্বাদ খাবারে আনে একস্ট্রা টেস্ট। এতে
আছে এন্টিমুটাজেনিক (Antimutagenic) এবং এন্টিটেসিভ এজেন্ট
(Antitussive Agent) যা টক্সিকেশন (Toxication) সরিয়ে
স্কিনের সেন্সিটিভিটি (Sensitivity) দূর করে। এছাড়া এর এন্টিসোলার
এজেন্ট (Anti solar agent) রোদে পোড়া কালচে দাগ দূর করে সানবার্ন
থেকে রক্ষা করে। ত্বকে খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি
স্কিনের ইরিটেশন (Irritation) দূর করে স্কিনকে হাইড্রেড করে। এতে ত্বক
ভেতর থেকে গ্লো করে এবং স্কিনকে করে আরও সজিব।
জাফরানের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১) জাফরানে রয়েছে বিস্ময়কর রোগ নিরাময় ক্ষমতা। মাত্র ১ চিমটি
জাফরান আপনাকে প্রায় ১৫টি শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
জাফরানে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদপিণ্ডের সমস্যাজনিত রোগ দূর করে।
২) হজমে
সমস্যা এবং হজম সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সমস্যা দূর করতে
সহায়তা করে জাফরান।
৩) জাফরানের
পটাশিয়াম আমাদের দেহে নতুন কোষ গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত
কোষ সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
৪) এর নানা উপাদান আমাদের মস্তিষ্ককে রিলাক্স
(Relax) করতে সহায়তা
৫) জাফরানের ক্রোসিন (Crocin) নামক উপাদানটি অতিরিক্ত
জ্বর কমাতে সহায়তা করে।
৬) নিয়মিত
জাফরান সেবনে শ্বাস প্রশ্বাসের নানা ধরনের সমস্যা
যেমন অ্যাজমা (Asthma), পারটুসিস (Pertussis), কাশি এবং বসে
যাওয়া কফ দূর করতে সহায়তা করে।
৭) মেয়েদের মাসিকের অস্বস্তিকর ব্যথা এবং মাসিক শুরুর আগের অস্বস্তি
দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই।
৮) জাফরানের
রয়েছে অনিদ্রা সমস্যা দূর করার জাদুকরী ক্ষমতা। ঘুমোতে
যাওয়ার আগে গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে পান করলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হবে।
৯) সামান্য
একটু জাফরান নিয়ে মাড়িতে ম্যাসাজ করলে মাড়ি, দাঁত
এবং
জিহ্বার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১০) গবেষণায়
দেখা যায় জাফরান দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং চোখের
ছানি পড়া সমস্যা প্রতিরোধেও কাজ করে।
১১) জাফরানের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি
উপাদান বাতের
ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা,
মাংসপেশির ব্যথা এবং দুর্বলতা দূর করতে অব্যর্থ ঔষুধ।
১২) অ্যাসিডিটির (Acidity) সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে সামান্য
একটুখানি জাফরান।
১৩) জাফরানদেহের কোলেস্টেরল (Cholesterol) এবং ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglyceride) নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
১৪) মস্তিস্কের গঠন উন্নত করতে জাফরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্মৃতিশক্তি
এবং চিন্তা ক্ষমতা উন্নত করতে এটি খুবই কার্যকরী।
১৫) এটি আলজাইমার (Alzheimer) এবং পার্কিনসন
(Parkinson) রোগ থেকে দূরে রেখে অক্সিডেটিভ (Oxidative) স্ট্রেস
থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বাঁচায়।
১৬) কিডনি,
যকৃৎ এবং মুত্রথলির রোগ থেকে মুক্তি দেয় জাফরান। ক্যান্সার
ও টিউমার নিরাময়েও জাফরান খুবই কার্যকরী।
এছাড়াও আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধের সাথে কয়কটি জাফরান
মিশিয়ে খাওয়া উচিত। এতে আমাদের অজানা অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে
যাবে। ১ গ্লাস জাফরান মিল্ক আপনার বাচ্চার মস্তিষ্ক সক্রিয় করতে অনেক
বেশি ভূমিকা পালন করে।এছাড়া ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল করতে চাইলেও
দুধের সাথে জাফরান মিক্স করে খান। কারণ ত্বকের বাহিরে যা কিছুই মাখি না
ত্বকে বলিরেখা
দূর করতেও সহায়তা করে। এছাড়াও
দুধের সঙ্গে জাফরান
মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নে জাফরানের ব্যবহার
স্যাফরন বা জাফরানের সঠিক কিছু ব্যবহার আছে। আসুন স্টেপ বাই স্টেপ জেনে নেই এর সঠিক ব্যবহার।
১) জাফরান ও চন্দন মাস্ক
প্রস্তুত প্রণালী
· একটি পাত্রে ৪ চা চামচ দুধের মধ্যে জাফরান দিয়ে জাফরানের হলুদ রঙ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
· হলুদ রঙ আসলে এর সাথে চন্দন মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট বানিয়ে
পুরো ফেইসে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট।
ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করবে।
এটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলেই কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন